Home গল্প, রহস্য ও ভৌতিক অন্ধ বিচার – ১১
রহস্য ও ভৌতিকগল্প

অন্ধ বিচার – ১১

গোপা মিত্র

অন্ধ বিচার

রহস্য ধারাবাহিক (পর্ব-১১)

কোর্টের কাজ শুরু হয়ে গেল। আজ অজেয় রায় প্রথমেই একটা পেন ড্রাইভ জজ্‌সাহেবের দিকে এগিয়ে দিলেন। বললেন, “মহামান্য জজ্‌সাহেব যদি এর ফুটেজটা একবার দেখেন ও সবাইকে দেখান। এটা ঐ রির্সটের ডাইনিং হলের ফুটেজ, যেটা আমি ঐ হলের সি সি ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করেছি”।

– কিন্তু আমি তো ঐ হলের ফুটেজ আগেই দেখেছি, আপনিও দেখেছেন, কে.কে. যেটা দিয়েছিলো।  

– স্যর ওটা এডিট করা ফুটেজ, এটা অরিজিন্যাল।

– কি বলছেন কি ? আপনি সেটা প্রমাণ করতে পারবেন? তা নাহলে কিন্তু আদালতে মিথ্যা বলার অপরাধে  আপনার শাস্তিও হতে পারে।

কে.কে.-ও বলে উঠলেন “ আপনি সেটা প্রমাণ করুন, আমার দেওয়া ফুটেজ সঠিক নয়”।

জজ্‌সাহেবও বললেন “আপনি আগে আপনার কথার সত্যতা প্রমাণ করুন, তারপরে আমি আপনার ফুটেজ দেখছি”।

 – বেশ তবে তাই হোক্‌। আমি এর জন্য কাঠগড়ায় বিক্রম সেনকে ডেকে নিতে চাই। 

বিক্রম সেন এসে কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন, শপথ নিলেন।

এবার অজেয় রায় তার প্রশ্ন শুরু করলেন,

– আপনি বিক্রম সেন?

– হ্যাঁ।

– আপনি থাকেন কোথায়?

– দীঘায়।

– আপনার পেশা কি?

– দীঘাতেই আমার একটা সাইবার কাফে আছে। সেখানে যেমন কম্পিউটার শেখানো হয়, তেমনই মানুষের প্রয়োজনে তাদের অনলাইন বেস্‌ড কাজকর্মও করে দেওয়া হয়, অবশ্যই টাকার বিনিময়ে। এতেই আমার বেশ চলে যায়।

– বুঝলাম। এবার ভালো করে একবার কোর্টরুমের ভিতরটা দেখুন তো, এখানে উপস্থিত কারুকে আপনি চেনেন কি না!

– হ্যাঁ, চিনি। ঐ যে উনি বসে আছেন, ওনাকে আমি চিনি, বলে সে, কে.কে.-র দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন। কদিন আগেই উনি আমার কাছে এসেছিলেন।

– কেন?

– একটা ভিডিও ফুটেজ এডিট করাতে।

– বেশ, আপনি সেটা প্রমাণ করতে পারবেন?

– হ্যাঁ, পারবো। আসলে উনি যেটা এডিট করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন, আমি সেই অরিজ্যিনাল ভিডিওর একটা কপি যেমন রেখে দিয়াছিলাম, তেমন ওনার বক্তব্যের ভিডিও আমি তুলে রেখেছিলাম। কারণ এর আগে একবার একজনের ভিডিও এডিট করে আমি মুশ্‌কিলে পড়ে গিয়েছিলাম, যার কথায় আমি কাজটা করেছিলাম, পরে তিনি সেটা অস্বীকার করেছিলেন, যার জন্য আমার শাস্তি পর্যন্ত হয়েছিলো। তারপর থেকেই আমি প্রমাণ রাখা শুরু করেছিলাম। এটা অবশ্য ওনার জানার কথা নয়। আমি নিজেকে বাঁচাবার জন্যই এখন এটা করে থাকি।

বিক্রমের কথার শেষে অজেয় রায় একটা পেন ড্রাইভ কোর্টের হাতে তুলে দিলেন, বললেন যে, এর মধ্যে আলাদা আলাদা দুটো ফুটেজ আছে। 

প্রথম ফুটেজ দেখাচ্ছে, বিক্রম সেনের সামনে, কে.কে. বসে কথা বলছেন আর তারপর একটা ভিডিও তার হাতে তুলে দিচ্ছেন। দ্বিতীয় ফুটেজে রয়েছে একটা ডাইনিং হলের ছবি।

অজেয় রায় বললেন, “দেখুন স্যর, সি সি ক্যামেরা থেকে নেওয়া এইটা ডাইনিং হলের অরিজিন্যাল ফুটেজ। একদিকে কাচের দরজার কিছুটা দেখা যাচ্ছে । মাঝখান টেবিল চেয়ার দিয়ে সাজানো, সেখানে কাচের প্লেট, বোল, কার্টলারী, ন্যাপকিন, সসের বোতল, নুন-মরিচদানি সব সাজানো রয়েছে। টেবিলের একদিকের দেওয়ালে রয়েছে একটা বেশ বড় আয়না, সেখানে একটা খোলা দরজার মধ্যে দিয়ে একটা ঘরের ভিতরের ছবি দেখা যাচ্ছে, যেখানে দাঁড়িয়ে বয় বেয়ারারা একটা টেবিলের ওপর রাখা কতকগুলো ডিশ বোল ন্যাপকিন দিয়ে মুছে পরিস্কার করছে। এডিট করা ভিডিওয় পুরো দরজা দেখা যাচ্ছে, রীতিন ঢুকছে সেটাও দেখা যাচ্ছে, কিন্তু কোনো আয়না বা উল্টোদিকের ঘরের কোনো প্রতিচ্ছবি এখানে দেখা যাচ্ছে না”।

সব কিছু দেখে জজ্‌সাহেব হাত নেড়ে অজেয় রায়কে থামতে বললেন, তারপর কোর্টে উপস্থিত পুলিশের দিকে চেয়ে বললেন “আমি চাই এর একটা উপযুক্ত তদন্ত হোক্‌, আর সেই রির্পোট আমার কাছে জমা পড়ুক। ততদিন পর্যন্ত কে.কে. কোর্টে উপস্থিত থাকলেও মামলায় অংশ নিতে পারবে না। এবার থেকে অন্য কোনো উকিল বিবাদীপক্ষের হয়ে এই কেস্‌ লড়বে”। 

“বেশ তাই হবে স্যর, এই কেস্‌ আমি এখন আর লড়ব না। তবে আপনি যদি অনুমতি দেন এই কেস্‌ আমার জুনিয়ার, আমার ছেলে লড়বে, তাতে আপনার আপত্তি নেই তো”!

(ক্রমশঃ)
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন।

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!