Home ভ্রমণ, প্রবন্ধ আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৪২
ভ্রমণপ্রবন্ধ

আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৪২

গোপা মিত্র

শীতল মরুর দেশে—লাদাখে

পর্ব ১

 

বিমানের পাশের জানলা দিয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি পড়তেই চমকে উঠলাম; বরফে ঢাকা ছোট বড় অসমান পাহাড় চূড়াগুলির তুষারধবল বিস্তার যেন এক ঢেউ খেলানো কার্পেট, মাঝে মাঝে তার ধুসর কালো রঙ্‌এর জ্যামিতিক ডিজাইন। এত কাছে সেই চূড়াগুলি মনে হচ্ছে, একবার যদি কোনোক্রমে জানলা দিয়ে নিচে নামতে পারতাম তাহলেই হয়ত তাদের কাছে পৌঁছে যেতাম; কষ্ট করে আর ট্রেকিং করার দরকারই হত না। দুর্ভাগ্য আমাদের ক্যামেরায় ছবি তোলা গেল না। শুধুমাত্র মনের ক্যামেরায় এই দৃশ্যছবি ধরে রাখলাম। হঠাৎই কার্পেট দর্শনের ইতি,আমরা পৌঁছে গেছি লাদাখের রাজধানী লে শহরের ছোট্ট পরিচ্ছন্ন বিমানবন্দর ‘কুশক বাকুলা রিম্‌পোচে এয়ারপোর্টে’।

২০১২ সালের জুলাই মাসে আমি আর কল্যাণ দুজনে কলকাতার এক নামী পর্যটক সংস্থার সঙ্গে এসেছি লাদাখ বেড়াতে। কলকাতা থেকে ট্রেণে দিল্লী এসে এক রাতের বিরতি। পরদিন ভোরের প্লেনে ১ঘন্টা২০মিনিটে লাদাখ পৌঁছনো। আমাদের সহযাত্রীরা সংস্থার কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের রাত্রিবাসের জন্য নির্দিষ্ট হোটেলে গেলেও,আমরা দুজনে, আমার ছোট বোন আনুর সঙ্গে তার বসন্ত কুঞ্জের বাড়ীতে এসে উঠলাম। আমাদের সঙ্গীরা সংস্থার কর্মচারীদের সঙ্গে  আমাদের আগে, একেবারে ভোরের ফ্লাইটেই পৌঁছে গিয়েছিল লে’তে। বাকী আমরা দুজন, তার পরের ফ্লাইটে সব শেষে এসে পৌঁছলাম।

অতীতে কাশ্মীরের বৃহত্তম জেলা, বর্তমানে কেন্দ্র শাসিত, বিশ্বের সর্বোচ্চ অঞ্চল,মরুপর্বতের দেশ লাদাখের উচ্চতা ৯ হাজার থেকে ২৫ হাজার ফুট পর্যন্ত, অবস্থান তিব্বতীয় মালভূমির পশ্চিম প্রান্তে, উত্তরে কারাকোরাম পর্বতমালা ও দক্ষিণে হিমালয় পর্বতশ্রেণীর মধ্যে। মধ্যভাগে তার রয়েছে জাঁসকার গিরিশ্রেণী। মৌসুমি মেঘ হিমালয় বিভাজিকায় ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় তার দক্ষিণ অংশে আর উত্তর অংশ অর্থাৎ লাদাখ রয়ে যায় বৃষ্টিহীন। অবশ্য বর্তমানে অনেক গাছপালা লাগানোর ফলে মাঝে মাঝেই লাদাখে মেঘ বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যায়।

আমরা যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। ছোট্ট পরিচ্ছন্ন এই সীমান্ত বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিদ্র করতে সশস্ত্র সেনাবাহিনী ইতিউতি ঘোরাফেরা করছে আর চারিদিকে লক্ষ্য রাখছে। তাদের পাশ কাটিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে এসে দেখি সংস্থার ম্যানেজার আমাদের জন্য গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছে।

১১৫৬২ ফুট (৩৫২৪ মিটার) উচ্চতার লে শহর ন্যাশানাল হাইওয়ে (NH1)দিয়ে যুক্ত শ্রীনগরের সঙ্গে।পাশ দিয়ে তার বয়ে চলেছে সিন্ধু নদ। মূল শহর থেকে লে বিমানবন্দর প্রায় ৪ কিমি দূরে। পরিচ্ছন্ন রাস্তা ধরে আমাদের গাড়ী খুব সহজেই পৌঁছে গেল আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ‘গাওলিং ইন্টারন্যাশনাল হোটেল (Gawaling International Hotel)-এ। চারতলা এই হোটেলটি বাজার থেকে দূরে একটু উঁচুতে, গলির মধ্যে হলেও এর গঠনশৈলী চমৎকার। সমগ্র হোটেলটি সজ্জিত অলঙ্কৃত কাঠের প্যানেল দিয়ে।

হোটেলে প্রবেশের পরই কতৃপক্ষ আমাদের সাদর অভ্যর্থনা জানালেন ছোট এক উত্তরীয়ের মত সিল্কের চাদর গলায় পরিয়ে দিয়ে। দেখলাম, উচ্চতা জনিত কারণে অক্সিজেনের অভাব হলে অক্সিজেনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। 

প্রথমেই পর্যটন সংস্থার ম্যানেজার আমাদের কয়েকটি অবশ্য পালনীয় নিয়মের কথা জানিয়ে দিলেন। উচ্চতা জনিত কারণে এখানের বাতাস হালকা, অক্সিজেনের পরিমাণ কম—তাই প্রথম দিন বেশী ঘোরাঘুরি না করে শরীরকে বিশ্রাম দিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরী। সংস্থার নির্দেশে আমাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রয়েছে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ‘কোকা ৬’ ও একটা ছিপিবদ্ধ শিশিতে কিছুটা কর্পূর। লাদাখে দিনে বেশ গরম, রাতে কন্‌কনে ঠান্ডা- তাই আমাদের সঙ্গে যেমন রয়েছে সানগার্ড লোশন, তেমনই রয়েছে টুপি, শীতের ক্রীম, শীতবস্ত্র ইত্যাদি। লে শহর ঘুরতে অবশ্য কোনো পারমিট লাগে না, তবে নুব্রা ভ্যালি, প্যাংগং সো বা সোমো রিরি বেড়ানোর জন্য ইনার লাইন পারমিটের প্রয়োজন। আমাদের অবশ্য সেসবের কোনো চিন্তা নেই – সব প্রয়োজনীয় তথ্য আমরা আগেই সংস্থার কাছে জমা দিয়েছি, যা করার ওরাই করবে। সবশেষে আরো একটা দরকারী কথা হোটেলে পৌঁছবার পরই আমাদের জানিয়ে দেওয়া হল – যতই ঠান্ডা হোক্‌ না কেন, কোনো অবস্থাতেই আমরা রাতে যেন সব দরজা জানলা বন্ধ করে না শুই। ঘরের না হলেও অন্ততঃ বাথরুমের জানলা ও সঙ্গে ঘর বাথরুম সংলগ্ন দরজা অবশ্যই সামান্য খুলে রাখতে হবে যাতে কোনোমতেই ঘরে বায়ু চলাচলের ব্যাঘাত না ঘটে। হোটেলে পৌঁছবার পরই ম্যানেজার প্রত্যেককেই একটা করে ট্যাবলেট খেতে দিল। সহযাত্রী একজন ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, উচ্চরক্ত চাপ জনিত কোনো সমস্যা যাতে না হয় সেই জন্যই এই ওষুধ সেবন। আমি আর কল্যাণ অবশ্য সেই ওষুধ নিলাম না, পাহাড়ে বেড়াতে আমরা অভ্যস্ত। অনেকেই অবশ্য সেই ওষুধ কেবলমাত্র একদিনই নয়, পরেও নিয়েছিল।

প্রথম দিনই পরিস্থিতির কারণে আমি High Altitude Sickness এর কবলে পড়লাম। সকাল দুপুরের খাওয়া ও বিশ্রামের পর বিকেলে আমাদের কাছাকাছি একটু বেড়িয়ে আসার অনুমতি মিললো। সামনের রাস্তা দিয়ে একটু এগিয়ে নিচে নামলেই বাজার- তাদের দেখিয়ে দেওয়া রাস্তায় আমাদের সহযাত্রীরা সকলে চলল সেই বাজারে। আমাদের অবশ্য বাজার দেখার কোনো ইচ্ছেই নেই, তাই আমরা চললাম হোটেলের চারিপাশটা একটু ঘুরে দেখতে। দূরের পাহাড়, পাশের সবুজ গাছপালার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা অচেনা কোনো ঝোরা, মাঝেমধ্যে কোনো একটা বসতি, পথিপার্শ্বে দুএকটা ছোট ছোট দোকান- এসব দেখতে দেখতে কখন যে ফেরার পথটাই হারিয়ে ফেলেছি, বুঝতে পারিনি। অন্ধকার ঘনিয়ে আসতেই ফিরতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু তখন সব পথই একাকার। দোকানগুলোয় জিজ্ঞাসা করেও পথের হদিস মিললো না। অবশেষে হোটেলে ফিরলাম ঠিকই, কিন্তু না চাইলেও তখন আমাদের হাঁটা হয়ে গেছে অনেকটা। কল্যাণ ঠিক আছে, কিন্তু আমার তখন মাথা ধরে গেছে, গা বমি বমি ভাব। তিনতলায় আমাদের ঘরে আর না উঠে নিচে ড্রইং ডাইনিং রুমেই বসলাম। রাতের খাবার দেওয়া হলে সবাই খেয়ে নিল, আমি খেলাম না। আমার খাওয়া ORS-এর জল। সঙ্গে আরো এক বোতল সেই জল নিয়ে উপরে উঠলাম প্রয়োজনে খাব বলে।

 

পরদিন আমি একেবারেই ফিট – কোনো অসুবিধাই নেই। আজ আমাদের লে’র দ্রষ্টব্যগুলি দেখার কথা। ভারী জলখাবারের পর আমাদের জন্য অপেক্ষারত কয়েকটি ছোট ছোট ফোর হুইলার গাড়িতে আমরা কজন করে চেপে বসলাম। পরে এই গাড়ীগুলিতে করেই আমরা সারা লাদাখ বেড়িয়েছিলাম।

‘লা’ অর্থাৎ গিরিবর্ত্ম (Pass), ‘দাখ’ অর্থাৎ দেশ। কেউ বলে গিরিবর্ত্মের দেশ, কেউ বলে গুম্ফার দেশ, কেউ বলে চাঁদের দেশ আবার কেউ বা বলে সো অর্থাৎ সরোবরের দেশ। অনেক নামেই পরিচিতি তান্ত্রিক মহাযান পন্থী বৌদ্ধধর্মের দেশ এই লাদাখের। যে নামেই ডাকা হোক্‌ না কেন, লাদাখের অমোঘ আকর্ষণ আমিও এড়িয়ে যেতে পারলাম না।

প্রথম দর্শনেই আমি প্রেমে পড়ে গেলাম লাদাখের। রুক্ষ শুষ্ক বৃক্ষহীন মরুপ্রায় বিশাল অসমান প্রান্তরের মাঝে মাঝে অদ্ভূতদর্শন নগ্ন পাহাড়ের সারি – কখনো হলুদ, আবার কখনো গৈরিক ,বাদামী, ধূসর, হাল্কা গোলাপী বা বেগুনী। শতশত বছর ধরে জলবায়ুজনিত ক্ষয়ের কারণে লাদাখের ভূমিরূপ তথা পাহাড়গুলি যেন ধারণ করেছে আশ্চর্য বৈচিত্রময় সব রূপ। তুষারশুভ্র হিমালয় ও তার সংলগ্ন পাহাড়ি শহরগুলি থেকে লাদাখ একেবারেই অন্যরকম। তবে এসবের সঙ্গেই মরুপ্রান্তরের মাঝে কখনো উঁকি দেয় উত্তুঙ্গ তুষারশৃঙ্গ, দেখা যায় খরস্রোতা পাহাড়ী নদী, অবাক করা নীল জলের হ্রদ বা ছোট ছোট সবুজ উপত্যকা, আর গুরুগম্ভীর গুম্ফাগুলি। মনে হয় যেন কোনো এক অদেখা অচেনা সৃষ্টিকর্তা লাদাখের বিশাল ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন অপূর্ব একচিত্র।

আমাদের প্রথম গন্তব্য লাদাখের সবচেয়ে ধনাঢ্য ও বৃহৎ ঐতিহ্যশালী গুম্ফা হেমিস, লে শহর থেকে প্রায় ৪৩ কিমি দূরে। একের পর এক শস্য ক্ষেত পেরিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ আমাদের পৌঁছে দিল পাহাড়ের উপরে হেমিস মনাস্ট্রীতে।

রাস্তায় সিন্ধুনদ পেরোলাম এক ছোট্ট সেতু দিয়ে। কাঠের তৈরী বিশাল এই মনাস্ট্রীর অন্দরে বহুমূল্য স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান রত্নরাজিতে শোভিত ঝক্‌ঝকে সোনালী বুদ্ধমূর্তি সহ রয়েছে একাধিক দেবদেবীর মূর্তি। গুম্ফার দেওয়াল রঞ্জিত বহুবর্ণ চিত্রে, রয়েছে কাপড়ের উপর অঙ্কিত শাক্যমুনির বিশাল এক পটচিত্র। এই মঠেই রয়েছে প্রাচীন পুঁথির এক বিশাল সংগ্রহশালা। ৫০০র অধিক লামা বাস করেন এই গুম্ফায়।

এখান থেকে আমরা চললাম, লে থেকে ১৭ কিমি দূরত্বে পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত থিক্‌সে গুম্ফায়। দ্বিতল উচ্চতাসম্পন্ন বিশাল এক নীল নয়ন অপরূপ বুদ্ধমূর্তি থিক্‌সে গুম্ফাকে যেন আলো করে রেখেছে। মাথার মুকুটে তার একাধিক দেবদেবীর বিস্ময়কর উপস্থিতির বর্ণচ্ছটা। রয়েছে বহু প্রার্থনাচক্র, অসংখ্য দেওয়ালচিত্র, থাংকা, অস্ত্রশস্ত্র ও সোনারূপার নানা দেবদেবীর মূর্তি। তবে এইসব শান্তমূর্তি বুদ্ধদেবের সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু ভীষণ দর্শন দেবদেবীর মূর্তিও। কারণ লাদাখীরা তান্ত্রিক বজ্রযানী বৌদ্ধ মতাদর্শে বিশ্বাসী। তাদের বিশ্বাস এই সব ভয়াল দর্শন দেবদেবী সংহারক রূপে তাদের শত্রু বিনাশ করে তাদের রক্ষা করে।

লাদাখের প্রতিটি গুম্ফা সংলগ্ন রয়েছে একটি করে প্রশস্ত প্রাঙ্গন। বছরের এক নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে এক উৎসবের আয়োজন করা হয়। সে সময় লাদাখী বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে চলে বর্ণাঢ্য সাজসজ্জায় সজ্জিত বিচিত্র মুখোশ পরিহিত লাদাখীদের দলবদ্ধ নৃত্যানুষ্ঠান (Dance Festival)।

লে থেকে ১৫ কিমি দূরে থিক্‌সে গুম্ফার পথে, প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত “স্যে প্যালেস ছিল পূর্বে লাদাখ রাজপরিবারের বাসস্থান। এর বিশাল চত্বরে রয়েছে এক গুম্ফা, যার মধ্যে অধিষ্ঠিত শাক্যমুনি বুদ্ধের সোনালী মূর্তি। বলা হয় এটি লাদাখের দ্বিতীয় বৃহৎ মূর্তি। এর ছাদ থেকে নিচে লাদাখের শুষ্ক ধূসর রূপের এক চমৎকার চিত্র পাওয়া গেল।

এবার এলাম বর্তমান রাজাদের বাসস্থান স্টক প্যালেস। ভিতরে রয়েছে এক সংগ্রহালয়, যেখানে রয়েছে লাদাখী রাজপোষাক, মুকুট, মূর্তি ইত্যাদি।

সিন্ধুনদের দেখা পাওয়া লাদাখের অন্যতম আকর্ষণ। সিন্ধুদর্শন ঘাট থেকে নাগাল পাওয়া গেল সিন্ধু নদের। প্রতি বছর এই নদীতীরেই অনুষ্ঠিত হয় সিন্ধুদর্শন উৎসব। বাঁধানো ঘাটের সামনে দিয়ে ছোট ছোট ঢেউ তুলে কুলকুল করে বয়ে চলেছে সিন্ধু নদ। নিচে নেমে জল স্পর্শ করে দেখলাম বরফ ঠান্ডা। বিশ্বাস করা শক্ত সত্যিই আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি সিন্ধু নদের সামনে! গঙ্গা যমুনা ব্রহ্মপুত্র তো অনেক আগেই আমার দেখা – কিন্তু কোনো দিন যে সিন্ধু তীরে এসে দাঁড়াবো এমন তো আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। এই সেই নদ, যাকে কেন্দ্র করে একদিন গড়ে উঠেছিল প্রাচীন সেই সিন্ধু সভ্যতা।

এবার দৃষ্টি ফেরালাম সিন্ধু ওপারে, দেখলাম, নদ বরাবর বিছানো সবুজ তৃণভূমির চলমান বিস্তার, পিছনে তার প্রহরায় ধূসর পর্বত শ্রেণী, উপর দিয়ে তার উঁকি মারা তুষার ধবল পর্বত শৃঙ্গ, হাতছানি দিয়ে যেন আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে। এপারে আমাদের পায়ের কাছে জলরাশি বেষ্টন করা বিস্তীর্ন অঞ্চল আবৃত সবুজ অরণ্যে, শুধু তাই নয়, নদের মাঝে মাঝেই রয়েছে ঘন সবুজ দ্বীপের রাজ্য। চারিদিকে এত সবুজের সমারোহ, আমার মনে হল, যেন লাদাখের সব সবুজ এখানেই জড় হয়ে লাদাখকে করে তুলেছে এমন ধূসর বৃক্ষহীন। এত সবুজের জন্যই কি শুধুমাত্র সিন্ধু তীরেই গড়ে উঠেছিল প্রাচীন সেই সভ্যতা?

 

ঘাটের উপরেই রয়েছে কয়েকটি ছত্রি। মাথার উপরের সূর্য থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিলাম তার নিচে। শত শত বছর পূর্বে, একদিন এখানেই হাসিকান্নায় মিশে বয়ে চলেছিল এক জীবনপ্রবাহ। কালের অমোঘ নিয়মে আজ তার চিহ্নমাত্রও অবশিষ্ট নেই। জানি, আমরাও একদিন অতীত হয়ে যাব, কালের গর্ভে হারিয়ে যাব। ভবিষ্যত এসে সেই শূন্যস্থান আবার পূর্ণ করে দেবে। কিন্তু কাল তো থেমে থাকবে না, সে কেবল এগিয়েই চলবে। কারণ চলাই তো জীবন।

কল্যাণের ডাকে সচল হলাম। আবার শুরু হল আমাদের এগিয়ে চলা।

— প্রথম পর্ব সমাপ্ত —

লেখিকা পরিচিতি
 
 
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোও কিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন। দু-কলমের জন্যে জীবনে প্রথমবার কলম ধরা।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

  1. অপূর্ব লেখনী ও ছবি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। কোভিডের জন্য গত বছর শেষ মুহূর্তে যাওয়া ক্যানসেল করেছি। এখন খুব আফসোস হয়।

    1. অনেক দিন পর তোমার মন্তব্য পেয়ে খুব ভালো লাগল ।

Leave a Reply to Anjana datta Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!