Home ভ্রমণ, প্রবন্ধ আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৩২
ভ্রমণপ্রবন্ধ

আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৩২

গোপা মিত্র

ডেলো, তিনচুলে

বিশাল চওড়া প্রবেশ তোরণ পার হয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখ জুড়িয়ে গেলো। পায়ের নিচে বিছানো সবুজ তৃণভূমির কার্পেটের উপর প্রস্ফুটিত বর্ণোজ্জল হাসিমুখ ফুলগুলি যেন দুহাত বাড়িয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানালো। দৃষ্টি প্রসারিত করতেই সীমার মধ্যে চলে এলো চারিদিকের অবারিত অনন্ত শূন্যতা, যা নাকি মিশে গেছে উপরের নীল আকাশের রৌদ্রজ্জ্বল ব্যপ্তির সঙ্গে কোন্‌ সে সুদূরে। আমাদের গাড়ী তখন থেমে গেছে ডেলো পাহাড়ের সুদৃশ্য ট্যুরিষ্ট লজটির সামনে।

২০১৭ সালে জানুয়ারী মাসের মধ্যভাগে শীতকালে যখন আবার দার্জিলিং যাব স্থির হলো, তখনই আমরা দুজনে, আমি আর কল্যা‌ণ, মনস্থ করলাম এবার দার্জিলিং-এর সঙ্গে নতুন দুই গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্র ডেলো আর তিনচুলেও বেড়িয়ে আসবো। সেখান থেকে ফিরে গিয়ে আমরা আপাততঃ বিদায় জানাবো আমাদের প্রিয় দার্জিলিং-কে।

 সেইমতই আমরা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে প্রথমেই এসে পৌঁছলাম কালিম্পং। এখানের গাড়ীষ্ট্যান্ডেই এ গাড়ীর যাত্রা শেষ। এবার অন্য গাড়ীতে আমরা এগিয়ে চললাম ডেলোর পথে।

কালিম্পং শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের মাথায় সবুজে সাজানো ডেলো। সরু রাস্তা ধরে গাড়ী, সমানে উপরে উঠতেই থাকলো। পথিপার্শ্বে উদ্যান শোভিত মাত্র কয়েকটি বাড়ী। সেসব ছাড়িয়ে আমরা এসে পৌঁছলাম ডেলো কমপ্লে্ক্সের বিশাল গেটের সামনে। পরিচয় জানাতে সিকিউরিটি এসে বন্ধ গেট খুলে দিলো। 

লজে প্রবেশ করেই বিশাল Reception। সেখানে বুকিং শ্লিপ দেখাতে তারা একতলায় একটা ঘর খুলে দিলো। দেখলাম ঘরে আরামের সব ব্যবস্থাই মজুত। ঘর সংলগ্ন ব্যলকনি একেবারে চলতি পথের ধারে। পথের ক্লান্তিতে কল্যাণ আজ কোথাও বেরোতে চাইলো না। আমারও আপত্তি নেই। এমন নিরিবিলি নির্জনে ঘনায়মান সন্ধ্যায় অচেনা জায়গায় না বেরোনই ভালো – হাতে তো এখনও দুদিন সময় আছে। 

পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো পাখীর কূজনে। বারান্দায় এসে দেখলাম মিঠে রোদ গায়ে মেখে এক মিষ্টি সকাল  যেন অপেক্ষা করছে আমাদেরই জন্যে। তাড়াতাড়ি চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাইরে। ঢালু পাহাড়ের ধাপে ধাপে সবুজ ঘাসের লন আর দুষ্প্রাপ্য সব ফুলগাছ দিয়ে সাজানো ডেলো প্রকৃতপক্ষে এক স্বয়ংসম্পূর্ন বিনোদন পার্ক। বিনোদনের সবরকম উপকরণ – স্লিপ, দোলনা, আরো কত কি, সবই মজুত এখানে। চারিদিকে তার উড়ছে রংবেরঙের পতাকা।

শিশির ছোঁয়া ঘাসের উপর দিয়ে এগিয়ে চললাম View Point-এর দিকে। ফুল গাছগুলোর পাশ দিয়ে, এক সেতু পথ ধরে, পৌঁছে গেলাম উঁচুতে এক নজর মিনারে। তুষার শিরস্ত্রাণে আবৃত হিমশিখরগুলি, তখন জেগে উঠে চেয়ে আছে আমাদের দিকে। দূরে দেখা যায় সিকিমের পাহাড়, অনেক নিচ দিয়ে বয়ে চলে তিস্তা নদী। পাহাড়ের ঢালে গাছপালার জঙ্গল নেমে গেছে কোন্‌ সে অতলে। এমন চমৎকার সকালের কয়েকটা ছবি ক্যামেরা বন্দী করে, আমরা এগিয়ে চললাম বাগানের অন্য কোনো কোণে, অন্য কোনো নতুন ছবির সন্ধানে। বাচ্চাদের মত দোলনায় চড়লাম, ছাঁউনি দেওয়া বাঁধানো এক বসার জায়গায় কিছুক্ষণ বসে ইতিউতি দৃষ্টি ফেরালাম। তারপর ফিরে চললাম লজে, এখনও প্রাতঃরাশ সারা হয়নি।

হঠাৎই কানে এলো বাইরে থেকে ভেসে আসা এক কলগুঞ্জন। কি হলো? কোথা থেকে আসে এমন শব্দগুঞ্জন? বারান্দায় এসে দেখি বাইরে তখন জনতার ঢল নেমেছে – ছোট বড়ো বাচ্চা বুড়ো, কে নেই তার মধ্যে? এরা সকলেই এসেছে কালিম্পং বেড়াতে, সেখান থেকে এই ডেলো বিনোদন পার্ক বেড়িয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে যাবে নিচে কালিম্পং-এ। এখানে আসার জন্য এদের প্রত্যেককেই প্রবেশমূল্য দিতে হয়েছে। আমাদের অবশ্য সে চিন্তা নেই, যেহেতু আমরা এখানেই রয়েছি – আমরা যখন ইচ্ছা বাইরেও যেমন যেতে পারি, ভিতরেও তেমন আসতে পারি।

এই জনতার ভীড়ে আমরা আর বেরোলাম না। বারান্দায় বসে বসেই দেখতে লাগলাম লাল নীল হলদে সবুজ – কত রঙের গরম জামায় মোড়া এই সব আনন্দে উচ্ছ্বল পর্যটকদের। রোদ যত বাড়ছে, ভীড়ও তত বাড়ছে। দুপুর গড়িয়ে গেলো প্রায় বিকেলে, জনতাও আমাদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে নেমে গেলো নিচে।

এবার আমরা বেরোলাম। গেটের বাইরে রয়েছে এক প্যারা গ্লাইডিং সেন্টার। কয়েকজনকে দেখলাম পাখীর মত আকাশে উড়তে। বাঁ পাশে অযত্নবর্ধিত গাছপালায় আবৃত এক পাহাড় উঠে গেছে উপরে, আর ডান পাশে সবুজ উপত্যকা নেমে গেছে নিচে। তারই মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলেছে সরু পথ – যে পথ ধরে আমরা এসেছিলাম এখানে। 

অন্ধকার নামতেই এসে বসলাম লজের বারান্দায়। জনমানবহীন নিঃঝুম রাতের আঁধারে, বিশাল এই পার্কের বাতিস্তম্ভের কয়েকটি আলো যতটা না আলো ছড়াচ্ছে তার চেয়ে মনে হচ্ছে আঁধার বাড়াচ্ছে। কানে বাজে শুধু ঝিঁঝিঁর ঐকতান। চারিদিকের নিঃসীম শূন্যের মাঝে আমরা যেন ভেসে রয়েছি কোন এক অদ্ভূতুড়ে গা ছমছমে দ্বীপে। বেশীক্ষণ বসা গেলো না –এমন কন্‌কনে ঠান্ডা। তাড়াতাড়ি ঘরে এসে রুমহীটারটা চালিয়ে দিলাম। 

পরদিন ভোরে আবারও চললাম সেই ভিউ পয়েন্টে। আমাদের চোখের সামনে তখন হিমশিখরমালা, আর ৩৬০ ডিগ্রী বিস্তারে চতুর্দিকে তখন নিরালম্ব শূন্যতা – আমরা রয়েছি অনেক উপরে, শহর তখন অনেক নিচে। 

বিকেলেও হাঁটতে বেরোলাম পার্কের মধ্যে, তবে এবার অন্যদিকে। কখনো ফুলগাছগুলোর পাশ দিয়ে, কখনো কোন জলাশয়ের সেতুর উপর দিয়ে, কখনো আবার সরু কোন বাঁধানো উঁচু পথ ধরে বা কখনো সামান্য নিচ দিয়ে এগিয়ে চললাম আমরা  – পাহাড়ের ধাপে তৈরী পার্ক তো এমনই হবার কথা! চেষ্টা করলাম বিশাল এই এলাকার কোণে কোণে পৌঁছে এর চারিপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। একসময় দেখলাম পথ শেষ। রাতের অন্ধকার তখন চারিপাশের ছবি খুব দ্রুত মুছে দিচ্ছে। আমরা ফিরে চললাম নিজেদের আস্তানায়। 

বলতে ভুলেছি, সকালেই উঠেছিলাম লজের উপরতলায়। দেখলাম, চারিদিক কাঁচ দিয়ে ঘেরা বিশাল এক Hall, তালাবন্ধ। শুনলাম এই Conference Hall-এ বড়ো বড়ো Meeting হয়, তখন আলোয় ঝলমল করে এই Hall। 

পরদিন সকালে চলেছি, কালিম্পং থেকে ৩৫ কিলোমিটার আর দার্জিলিং থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে আর এক ছোট্ট শৈলগ্রাম তিনচুলে। সর্পিল আঁকাবাঁকা পথ এগিয়ে চলে কণিফার জঙ্গল আর পাহাড় সঙ্গী করে। নিচে উপত্যকা সবুজে সবুজে। মাঝে মাঝেই উঁকি দেয় হিমচূড়া – ড্রাইভার গাড়ী থামায়, আমরা ক্যামেরা তাক্‌ করি। আবার এগিয়ে চলে গাড়ী। দূরে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মাত্র দুএকটি বাড়ী, গ্রাম প্রায় চোখেই পড়ে না। নির্জন, জনমানবহীন পথ দিয়েই আমরা পৌঁছে গেলাম পাহাড় আর সবুজে ঘেরা আরো নির্জনতর এক পাহাড়ী গ্রামে – তিনচুলে।

দার্জিলিং জেলার সবুজ মলাটে মোড়া ৫৮০০ ফুট উচ্চতার তিনচুলে আজও প্রায় অনাঘ্রাত, অচেনা। চেনা ভীড়, চেনা বাজার, গলি, চেনা হোটেল, চেনা ম্যাল, ঘিঞ্জি গাড়ী ষ্ট্যান্ড কিছুই নেই এখানে। আছে শুধু পাহাড়ী লেপচা, লামা, শেরপাদের অনাবিল হাসি আর সাদর অভ্যর্থনা। 

আমাদের গাড়ী থেমে গেলো গুরুং গেষ্ট হাউসের সামনে – আসলে এটা একটা হোম ষ্টে। তিনতলা কাঠের এই ছোট্ট বাড়ীর চারিদিকে প্রস্ফুটিত দুষ্প্রাপ্য সব ফুলের মেলা, দুপাশে উড়ছে রঙবেরংএর পতাকা। তারই মধ্যে দিয়ে এগিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম তিনতলায় আমাদের নির্দিষ্ট ঘরে – আধুনিক স্বাচ্ছন্দ্যের সমস্ত ব্যবস্থাই সেখানে মজুত।

তিনচুলে অর্থাৎ তিনটি উনুন বা চুলা। তিনটি পর্বত চূড়া, যা কিনা দেখতে অনেকটা চুলার মত,  বেষ্টন করে রয়েছে পাহাড়ী এই গ্রামটিকে – তাই এই নাম। নির্ভেজাল প্রকৃতির মাঝে কয়েকটা দিন কাটাতে চাইলে , তিনচুলে একেবারেই আদর্শ – শান্ত নির্জন।

আমাদের তিনতলার কাচের জানলার মধ্যে দিয়েই দেখা যায়, মেঘলা আকাশ নাকি কুয়াশা মাখা দূরের পাহাড় আর তার নিচের উপত্যকায় সবুজের জঙ্গল। দোতলার খোলা ছাদে এসে আছড়ে পড়ে পাহাড়ের কন্‌কনে ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাপটা, ছড়িয়ে পড়ে রংবেরংএর ফুলের মিশ্র সৌরভ, আর সঙ্গে কানে আসে পাখীর কলতান। 

বিকেলে হাঁটতে বেরোলাম গ্রামের পথে। ধারেপাশে অবশ্য বাড়ীঘর বিশেষ চোখে পড়লো না। পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে দুপাশের ঝুঁকে পড়া গাছের ছায়াময় পথ ধরে পৌঁছে গেলাম View Point এ। রাস্তা থেকে একটু উপরে View Point এ তখন আমাদের জন্য অপেক্ষারত কাঞ্চনজঙ্ঘা, শ্বেতশুভ্র বসনে স্তব্ধতার মূর্ত প্রতীক হয়ে। অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগেই তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম আমাদের নিরাপদ আশ্রয় – গেস্ট হাউসে।

পরদিন ভোরবেলা যাবো সূর্যোদয় দেখতে View Point-এ, এমনই স্থির করে, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে পর্দা সরিয়ে জানলার বাইরে চোখ রাখলাম। অন্ধকার চরাচরে, প্রকৃতি তখনও আবৃত মেঘের আবরণে। আকাশে নেই একটিও তারা। দরজা খুলে বাইরে আসতেই, ঠান্ডায় কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। তাড়াতাড়ি ঘরে এসে আবার রুমহিটারের সামনে বসে পড়লাম। বুঝতে পারলাম এই ঠান্ডায় অন্ধকার পথে এগিয়ে গেলেও সূর্যোদয় দেখার কোন সম্ভাবনাই নেই। একটু পরে আকাশ পরিস্কার হলে সুর্যের দেখা মিললো। সুর্যের প্রথম আলোর উদ্ভাসে আকাশ তখন রঙীন। অন্ধকার অরণ্যপ্রকৃতি, দুরের মেঘপাহাড়, তখন রাতঘুম ভেঙে সবে চোখ মেলছে, পাখীর কাকলি জানিয়ে দিচ্ছে, তারাও জেগে গেছে – আর তাদের সকলের সঙ্গী হয়ে আমিও আবাহন জানালাম উদ্ভাসিত সেই নতুন দিনের। হোটেল থেকেই সেই নতুনের আগমনের ছবি তুলে নিলাম। 

প্রাতঃরাশ সেরে বার হলাম হাঁটতে।  আলো আঁধারি নির্জন বনপথ ধরে আত্মমগ্ন আমি এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে, কানে বাজে শুধু নির্জনতার এক আশ্চর্য শব্দ – যা সম্ভবতঃ উঠে আসে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে। পাশে কল্যাণের উপস্থিতি তখন প্রায় ভুলেই গেছি। হঠাৎই কানে আসে অচেনা কোনো পাখীর ডাক – সচেতন আমি ফিরে আসি আবার বাস্তব পৃথিবীতে। 

শীত রোদ গায়ে মেখে ঘুরে বেড়ালাম গ্রামের পথে। যদিও গ্রাম বলতে দূরে দূরে দুচারটে ছোটো ছোটো বাড়ী ছাড়া আর কিছুই নজরে এলো না। পাহাড়ের ঢালে উঁচু নিচু পথে ছোটো ছোটো কটেজাকৃতি বাড়ীগুলির সংলগ্ন বারান্দায় ফুল আর পাতাবাহারের গাছ। তবে রাস্তা একেবারেই জনমানবশূণ্য।

দুপুরের আহারের পরে আজ আর কোথাও বেরোলাম না, এসে বসলাম গেষ্টহাউসের দোতলার ছাদে। মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে, উন্মুক্ত ছাদের এই পরিসরে আজ আমাদের শীতবিলাসিতা এক কাপ চায়ের সঙ্গে। আস্তে আস্তে বিকেলের রোদ নিভে এলো – কুয়াশা মাখা অন্ধকারে মেঘের দলও তখন নেমে এলো আমাদের কাছে। চারিপাশে তখন আশ্চর্য এক মায়াময় পরিবেশ। হঠাৎই ঝপ্‌ করে হয়ে গেলো সব অন্ধকার, আর চারিদিক কন্‌কনে ঠাণ্ডা।

পরদিন দেখলাম তিনচুলে মনাষ্ট্রি – ছোট হলেও জঙ্গলের মাঝে দেখতে ভালোই লাগলো। এবার গাড়ী নিয়ে চললাম এখান থেকে ৩ কিমি দূরে তাকদায়। ছোট এক বাজার বসেছে সেখানে। রয়েছে এক অর্কিড সেন্টার। কিন্তু গাড়ী থেকে নেমে উঠতে হলো অনেক উপরে। বিশাল এই অর্কিড সেন্টার সজ্জিত ছোট বড়ো নানারকম গাছপালা দিয়ে। রয়েছে এক জলাশয়ও। অর্কিড ঘরের নানাবর্ণের, নানারূপের অর্কিডগুলি চোখ ফেরাতে দেয় না।  

তিনচুলেরই মত এখানের আশেপাশের বসবাসকারীদেরও জীবিকা জৈবকৃষি। প্রায় প্রত্যেকেরই রয়েছে কৃষি খামার, কমলালেবুর বাগান। আমাদের এই কদিনের খাদ্যের সবই এদের ক্ষেতের সব্জী দিয়ে প্রস্তুত ছিল। খাবারের সঙ্গে প্রতিদিনই ছিল কোন না কোন চাটনী বা আচার। সকাল বা বিকেলের খাবার বা জলখাবারের ব্যবস্থা নিচের খাবার ঘরে – সবসময়ই বাড়ীর কোন না কোন সদস্য উপস্থিত থাকতেন সেখানে, আমাদের দেখাশোনার জন্য। কিন্তু রাতের খাবার এরা হটপটএ করে আমাদের ঘরেই পৌঁছে দিতেন – অত ঠান্ডায় যাতে আমাদের ঘরের বাইরে না যেতে হয় সেইজন্য। ঘরেই খেয়ে আমরা বাসনপত্র দরজার বাইরে রেখে দিলে, ওরা ওদের সুবিধামত এসে নিয়ে যেত। 

তিনদিনের নির্জনবাস শেষে আমরা এবার ফিরে চললাম আমাদের সেই প্রিয়, চির পুরাতন অথচ চিরনূতন কাঞ্চনজঙ্ঘার পায়ের তলে – দার্জিলিং-এ। এখন আমরা কয়েকটা দিন কাটাবো শুধুমাত্র কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে, যার বৃত্তান্ত আমি ঠিক এর আগের পর্বেই লিখেছি।

— ডেলো তিনচুলে পর্ব সমাপ্ত —

লেখিকা পরিচিতি
 
 
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন। দু-কলমের জন্যে জীবনে প্রথমবার কলম ধরা।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

  1. দারুণ দারুণ লাগল পড়তে তোমার এই trip সমন্ধে।কি সুন্দর সব ছবি তুলেছ।

Leave a Reply to Ritwick Ray Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!