Home গল্প, রহস্য ও ভৌতিক অন্ধ বিচার – ০৭
গল্পরহস্য ও ভৌতিক

অন্ধ বিচার – ০৭

গোপা মিত্র

অন্ধ বিচার

রহস্য ধারাবাহিক (পর্ব-৭)

এবার অনুপমার সাক্ষ্যগ্রহণ। মাথা মুখ ঢেকে অনুপমা উঠলো সাক্ষ্য দিতে। কিন্তু তার আগে অজেয় রায় জজসাহেবকে বললেন যে আপনি যদি অনুমতি দিয়ে কোর্ট রুম খালি করে দেন তবে ভালো হয়। কারণ হয়ত এমন অনেক প্রশ্ন উঠবে যেগুলোর উত্তর সকলের সামনে দিতে অনুপমা লজ্জা পাবে। 

– বেশ তাই হোক্‌।

তার আদেশে কোর্টরুমে রয়ে গেলেন শুধু অনুপমার মা বাবা আর উকিল পেশকাররা। 

অনুপমা কাঠগড়ায় উঠে শপথ নিল। অজেয় রায় তাকে সেদিনে ঠিক কি ঘটেছিলো জিজ্ঞাসা করলেন। অনুপমা সেদিনের ঘটনা জজ্‌সাহেবকে আনুপূর্বিক সব বললো। 

এবার কে.কে. উঠলেন তাকে জেরা করতে।

– আপনার নাম?

– অনুপমা।

– বাবার নাম?

– বেদ ব্যানার্জী?

– না। আমি আপনার আসল বাবার নাম জানতে চাইছি।

– বাবা তো বাবাই হয় না কি! তার আবার আসল নকল হয় কি?

– না, আমি আপনার জন্মদাতা পিতার নাম জানতে চাইছি।

– বুঝলাম। যদিও তাকে আমার মনে নেই, তবুও তার নামটা আমার জানা আছে, শোভন রুদ্র।

– ধর্ষণ বা sex কাকে বলে, সেটা কি আপনি জানেন? আপনার এর আগে এমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে কি?

– না আমার এমন কোনো অভিজ্ঞতা এর আগে হয় নি। তবে sex কি , সেটা আমি জানি। কারণ আমাদের স্কুলে ক্লাস নাইনে, Sex Education পড়ানো হতো। 

– আপনার Doctor Certificate আমি দেখেছি, আপনার শরীরে কোনোরকম আঁচড়ানো, কামড়ানোর দাগ নেই, বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মানে আপনার কথামত বিবাদী যখন আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিল, আপনাকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল বা আদর করছিলো চুমু খেয়েছিলো আপনি তাকে কোনো রকম বাধা দেননি। তার মানে প্রথম যৌন সম্পর্ক আপনি তখন বেশ উপভোগ করছিলেন? ঠিক বলছি তো?

– একেবারেই না। আমি প্রথমে বাধা দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু যখন দেখলাম, তার শক্তির সঙ্গে আমি পেরে উঠছি না, আর চেঁচালেও কোনো লাভ নেই, তখন বাধা দেওয়া ছেড়ে দিয়ে তার মুখটা হাত দিয়ে ভালো করে অনুভব করতে চেষ্টা করলাম। কারণ মনে মনে আমি তখন বেশ বুঝে গেছি, তাকে শাস্তি দেওয়ার আমার কাছে একমাত্র উপায় তার একটা সঠিক মূর্তি গড়ে সকলের সামনে নিয়ে আসা। 

– আচ্ছা, আপনার বাবা আপনাকে কখনও জড়িয়ে ধরেছেন, আদর করেছেন? আপনি কি তখন বাবাকে বাধা দিয়েছেন? বা, বাবার সেই জড়িয়ে ধরা আপনি উপভোগ করেননি?

– Objection My Lord! উনি একজন বাবার সঙ্গে একজন ধর্ষকের তুলনা করছেন।অজেয় রায় আপত্তি জানালেন।

– Objection sustained! আপনি এমন আপত্তিকর প্রশ্ন করবেন না। – জজ্‌সাহেব বললেন।

– ঠিক আছে My Lord! – কে.কে.-র উত্তর।

তাদের কথা শেষ হলে, অনুপমা বলে উঠল, “My Lord, আমি ওনার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই। আমাকে অনুমতি দেওয়া হোক্‌’’।

– বেশ বলুন।

অনুপমা বললো, “সব বাবা’ই তাদের মেয়েদের জড়িয়ে ধরে, আদর করে। সেটা কি খুব একটা আশ্চর্যের কথা? তাতে মেয়েরা বাধা দেয় না কারণ তাতে দুজনের মধ্যে bonding বা ভালোবাসা জড়িয়ে থাকে। কিন্তু বাইরের কোনো একজন অচেনা পুরুষ যখন কোনো একজন অপরিচিত মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জড়িয়ে ধরে আদর করতে চায়, তখন তার মধ্যে কি কোনো ভালোবাসা থাকে নাকি জবরদস্তি থাকে? সেক্ষেত্রে কি বলা যায় যে, ছেলেটি মেয়েটিকে ভালোবেসে তার সম্মতি নিয়েছে? আমি বলতে চাইছি যে, আমার শরী্রে, আমার নিজের অধিকার, সেই শরীর আমি কাকে স্পর্শ করতে দেব কাকে নয়, সেটা আমি নিজে ঠিক করব, অন্য কেউ নয়। কাজেই যেখানে আমি তাকে, আমাকে স্পর্শ করার অনুমতি দিইই নি সেটা সে করলো কি করে? এটাকে কি পাশবিক অত্যাচার বা ধর্ষণ বলা যাবে না! কাজেই আমি মহামান্য আদালতের কাছে সেই ধর্ষক ছেলেটির শাস্তি চাইছি।

– আচ্ছা, আপনাদের দোতলার ষ্টুডিওর গ্রিলের জানলা বা সিড়িঁর দরজা কি সারাদিন খোলা থাকে?

– না, একেবারেই না। আমরা ওপরে গেলে তবেই খোলা হয়। 

– তাহলে সেদিন খোলা ছিল কেন? আমরা কি তবে ধরে নেব যে আপনার বাবা ইচ্ছাকৃত ভাবেই দরজা, জানলা খুলে রেখে গিয়েছিলেন, তার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য? যতই হোক্‌ আপনি তো ওনার নিজের মেয়ে নন, সৎ মেয়ে!

– আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার বাবা কোনোদিনও আমাকে যেমন সৎ মেয়ে ভাবেন নি, আমিও তেমনি ওনাকে কখনও সৎ বাবা ভাবিনি। আমাদের মধ্যে বাবা মেয়ের মধুর ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে।উনি যেমন আমাকে কন্যা জ্ঞানে স্নেহ করেন, আমিও তেমনি ওনাকে পিতৃ জ্ঞানে ভলোবাসি। কাজেই ইচ্ছাকৃত ভাবে উনি কখনোই আমার ক্ষতি চেয়ে সব খুলে রেখে চলে যাবেন না। অনেক দূরে যেতে হবে, সময় মত পৌঁছতে হবে, এই সব চিন্তায়, তাড়াহুড়ো করে উনি হয়ত ভুল করে ওগুলো খুলে রেখে চলে গিয়েছিলেন। আর ওই ধর্ষক ছেলেটি সেই সু্যোগটাই নিয়েছে।

– আমার আর কিছু জিজ্ঞাস্য নেই।

পরের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঘোষণা করে, সেদিনের মত আদালত মুলতুবী ঘোষণা করা হলো।

(ক্রমশঃ)
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন।

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!