Home গল্প, রহস্য ও ভৌতিক অন্ধ বিচার ~ ০৫
রহস্য ও ভৌতিকগল্প

অন্ধ বিচার ~ ০৫

গোপা মিত্র

অন্ধ বিচার

রহস্য ধারাবাহিক (পর্ব-৫)

বাড়ীর ভিতরে এসে বেদবাবু তাঁর মেয়ে অনুপমা, স্ত্রী রুমা, আর সুহাসীর সঙ্গে অজেয় রায় আর সুমেধার পরিচয় করিয়ে দিলেন। অজেয় রায় বেদবাবুকে বললেন যে আমি আপনাদের সকলের সঙ্গে পরে কথা বলছি। তার আগে আমি একান্তে আপনার মেয়ের সঙ্গে একবার কথা বলতে চাই।

সবাই চলে গেলে, অজেয় রায় অনুপমাকে বললেন, “দেখো মা আমি তোমার বাবার মত। লজ্জা কোরো না। আমাকে তুমি সব কিছু খুলে বলো। সব সত্যি বলবে, কোনো কিছু বাদ দেবে না। যদি অপ্রয়োজনীয় ভেবে কোনো কিছু বাদ দাও, তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে পারবো না”।

অনুপমার বলা শেষ হলো। সব শুনে অজেয় রায় তাকে বললেন যে, বেশ আমি এবার তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবো, তুমি সেগুলোর ঠিক ঠিক জবাব দেবে। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হলো। তিনি অনুপমাকে আশ্বস্ত করে বললেন “বেশ আমি তোমার কেসটা হাতে নিলাম। পরশু তোমার কেসের শুনানী আছে। তোমাকে কোর্টে সাক্ষ্য দিতে যেতে হবে। বিবাদী পক্ষের উকিল নানাভাবে তোমাকে জেরা করবে। কিন্তু তুমি ভয় পেয়ো না। উত্তর দেবার সময় তুমি একটু চিন্তা করে উত্তর দেবে। কারণ যেনতেন প্রকারেণ কেসটা তিনি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইবেন, যাতে করে অভিযুক্ত ছাড়া পেয়ে যায়। এমন অনেক প্রশ্ন উনি করবেন, যাতে তোমার উত্তর দিতে সমস্যা হবে, সেক্ষেত্রে আমি objection দেবো, আর তুমি বুঝে যাবে, এই প্রশ্নের উত্তর তোমার না দিলেও চলবে বা অনেক ভেবে তোমাকে উত্তর দিতে হবে। তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে। আশা করি আমার কথাটা তুমি বুঝতে পারছো। আমি তোমায় যেমন যেমন বললাম, তুমি ঠিক তেমন তেমনই করবে”। অনুপমা ঘাড় নেড়ে সায় দিল।  

– বেশ এবার তোমার বাবা মা’ কে ডাকো, আমি তাদের সঙ্গেও একবার কথা বলতে চাই।

কথা বলা শেষ হলে, তিনি বললেন যে, আমি আপনার মেয়ের কেসটা নিলাম। তবে যাবার আগে আমি একবার আপনার সম্পূর্ণ বাড়িটা ঘুরে দেখে যেতে চাই। 

“বেশ তো আসুন না”, বেদ বাবু বললেন। 

তিনি অজেয় রায়কে সবকিছুই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন, একতলায়, ড্রইং রুমের পরেই খানিকটা বদ্ধ জায়গা, সেখান থেকে সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলায়, সিঁড়ির মুখেই রয়েছে একটা দরজা, যেটা এখন এদিক থেকে বন্ধ রয়েছে। এরপরেই রয়েছে, সংলগ্ন বাথরুম সহ পাশাপাশি দুটো শোবার ঘর। সবশেষে রান্নাঘর, খাবার ঘর। দুটো ঘরেরই পিছনের দিকের জানলা খোলা। সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে পিছনে খানিকটা জায়গা ছেড়ে বাড়ীটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। সিঁড়ির দরজার খিল, ছিটকিনি খুলে তিনি এবার দোতলায় উঠলেন। দোতলার পুরোটাই বেদবাবুর ষ্টুডিও, চারিদিকে সম্পূর্ণ অসম্পূর্ণ নানারকম মূর্তি, রঙ, তুলি, মাটি, আলমারীতে কিছু কিউরিও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়ে গেছে। ষ্টুডিওর চারিদিকটাই গ্রিল দিয়ে ঘেরা হলেও, গ্রিলের জানলা খোলা থাকলে যে কেউ রান্নাঘরের কার্ণিশ দিয়ে উঠে, জানলা টপকে ষ্টুডিওয় অনায়াসে ঢুকে পড়তে পারবে। 

– আমার দেখা শেষ হয়েছে এবার আমি ফিরবো। “কিন্তু তার আগে একটা কথা”, অমলিন বাবুর দিকে ফিরে, তিনি বললেন “ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্টের একটা কপি, আর কেস ডায়েরীর কপিগুলো আপনি সুমেধার হাত দিয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবেন। বেশ এখন তাহলে চলি। কোর্টে দেখা হবে।”

(ক্রমশঃ)
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন।

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!