Home বিবিধ, গল্প প্যাশন নিয়ে গল্প
বিবিধগল্প

প্যাশন নিয়ে গল্প

 

সুলগ্লা রায়


গল্পটা আমার মেজোমামার। আমি ডাকি মেজো।  বয়স এখন সত্তর এর দিকে চলেছে। চেহারায় যদিও তার ছাপ নেই, চলন বলন ও সেইরকম দাপুটে। সারাজীবন কাজ করেছে বেসরকারি কন্সট্রাকশন ফার্মে।

কেন আজ মেজোর গল্প বলতে বসলাম, তার একটা প্রেক্ষাপট আছে। এখনকার ছেলেমেয়েদের মুখে প্রায়ই একটা শব্দ শুনছি – প্যাশন। কথায় কথায় ওরা এই শব্দটা ব্যবহার করে। অধিক ব্যবহারের যে কোন শব্দ ক্লিশে হয়ে যায়, তা ওরা বোঝে না। যেমন বোঝে না হিং-বং-ইং-ভাষায় কথা বলা শ্রুতিকটু, অর্থহীন। ওরা সেটাই বলবে।

যা বলছিলাম – প্যাশন। কথাটা বুঝে ব্যবহার করে  ছোটরা নাকি না বুঝে জানি না।  তবে একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে ‘প্যাশন’ আর ‘হবি’ শব্দ দুটোর মাঝখানে যে ইমোশনাল বা আবেগজড়িত  তফাৎ রয়েছে সেটা তারা জানে না। প্যাশনের  সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ আমি  নির্বাচন করতে পারিনি। কিন্তু প্যাশন  কাকে বলে, জীবন জুড়ে একটা মানুষ কিভাবে প্যাশনকে  রক্ষা করতে পারে সেটা, বলতেই আজ মেজোমামার গল্প।

মেজোমামার বড় হয়ে ওঠা এক মফস্বল শহরে। স্কুল পেরিয়ে কলেজ আর তারপর আইন পড়ার জন্য কলকাতায় আসা। সেই সব দিনগুলি  ছিল সমস্যা জর্জর। একদিকে লেখাপড়া শেষ করে অর্থ উপার্জনের তাগিদ, আর অন্যদিকে অস্থির রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিজের সঠিক অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা – তখনকার যুব সমাজকে অবিন্যস্ত করে  ফেলেছিল।  মেজোও  ছিল চিন্তিত।  নিজেকে হারিয়ে না ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছিল অবিরত।

এই সমস্ত কিছুর ফাঁক গলেও ‘মেঘ ছেঁড়া আলো’  আসতে থাকে।  মেজ খুঁজে পায় এক আনন্দের জগত; এক নির্মল ভালোলাগার, খুশীর, আবেগের বহিঃপ্রকাশের মন্ত্র।  মঞ্চস্থ করতে থাকে একটার পর একটা ‘নাটক’। যোগাযোগ বাড়তে থাকে, রিহার্সাল বাড়তে থাকে, নাটক মনের মধ্যে, প্রাণের ভিতর একটা গভীর স্থান করে নেয়।

এদিকে চলতে থাকে জীবন যুদ্ধ। বেঁচে থাকার লড়াই। রোজগারের তাগিদে চলে যেতে হয় চেনা শহর পেরিয়ে, নিজের রাজ্য ছেড়ে  ভিন রাজ্যে। বন্ধ হয় ‘শখ’। বন্ধু হয় ‘সংসার’।  কালের নিয়মে দিন চলতে থাকে বয়স বাড়তে থাকে। এই পর্যন্ত যা গল্প বললাম সেটা নতুন কিছুই না; সব মানুষের জীবন এই গতানুগতিক পথে ধাবমান। ছোটবেলার শখ, যৌবনের স্বপ্ন  ম্রিয়মাণ।

কিন্তু এই গল্পের একটা ইউটার্ন আছে। মেজমামা এখন রিটায়ার্ড পার্সন। বয়স তো পেরিয়ে এসেছে অনেকখানি। একবার হার্ট বাইপাস সার্জারিও হয়ে গেছে। ছেলে-বৌমা নিয়ে ভরা সংসার। এহেন মেজ মামা এখন ফিরে পেয়েছে তার পুরনো  শখকে। যে স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেছিল, সংসারের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হতে হতে, যে স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে দমিয়ে রেখেছিল, সেগুলো এখন তার হাতের নাগালে। বেঁচে  উঠেছে নাটক করার স্বপ্ন। সুপ্তোত্থিত।

চলছে। নাটক করা চলছে। রিহার্সাল চলছে। অভিনয় চলছে। আজ মিনার্ভা, কাল জ্ঞান মঞ্চ, পরশু গিরিশ মঞ্চ। পর্দা  উঠছে, পর্দা নামছে। স্বপ্ন উড়ছে – চোখ মেলছে –  মন হাসছে – আর এইভাবে বেঁচে থাকছে প‍্যাশন – এক আবেগতাড়িত শখ – এক  সুখানুভূতি।।



Sulagna Roy

Edu. Qualification:  M.A. in Economics, B.Ed.

Profession:
1. Formerly Asst. Teacher of an ICSE School.
2. Formerly Headmistress of an ICSE School


 

Author

Du-কলম

Join the Conversation

Leave a Reply to Suparna Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!