Home বিবিধ, প্রবন্ধ এক অমলিন সুখস্মৃতি
বিবিধপ্রবন্ধ

এক অমলিন সুখস্মৃতি

লেখক : পার্থসারথি সাহা


১৩ই জুলাই ১৯৯৭।

যে কোনো ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের জীবনে এক স্বপ্নের দিন। আমি ভাগ্যবান যে সেই দিনটা আমি উপভোগ করতে পেরেছিলাম মাঠে থেকে। ঐদিন ছিলো ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনাল, ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। তার আগেই ৬ই জুলাই কোয়ার্টার ফাইনাল খেলায়, ইস্ট বেঙ্গল ৪-০ গোলে পর্যদুস্ত করেছে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে। কিন্তু ধারে ভারে অনেক এগিয়ে মোহনবাগান সেবার। কারণ তাদের কোচ অমল দত্ত প্রথম নিয়ে এসেছিলেন ডায়মন্ড ছক। একসঙ্গে ৫ জন আক্রমণে উঠবে আবার একসঙ্গে ৫ জন মিলে নামবে ডিফেন্সে। কোনোও দল নূন্যতম প্রতিরোধ গড়তে পারেনি সেমিফাইনাল অবধি মোহনবাগানের সামনে।

এহেন ভয়ঙ্কর মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের সম্বল কোচ পি. কে. ব্যানার্জী, ভাইচুং ভুটিয়া বলে একটা পাহাড়ি ছেলে, যে সে সময়ে একটু-আধটু নাম করেছে ইস্টবেঙ্গলে আর বিদেশী গোলকীপার এজেন্ডা; যার পায়ের বুট ইন্ডিয়া তে পাওয়া যায়নি, কেনিয়া তে অর্ডার দিয়ে আনানো হলো। এর মধ্যে অমল দত্ত করে বসলেন এক মজার কান্ড। ভাইচুংকে ‘চুংচুং’ ডিফেন্ডার ওমেলোকে ‘ওমলেট’ আর মিডফিল্ডার সোসোকে ‘শসা’ বলে ডাকা শুরু করলেন। বুদ্ধিমান কোচ পি. কে. ব্যানার্জী ছিলেন ‘ভোকাল টনিক’-এ ওস্তাদ মানুষ। তিনি এগুলোকে ড্রেসিং রুমে বললেন ছেলেদের তাতাতে।

অবশেষে এলো সেই দিন। দুই কোচ এর বাকযুদ্ধে যেন পুরো রাজ্যের রাস্তা হয়ে উঠলো যুবভারতী। ১,৩১,০০০-এর মতো মানুষ উপস্থিত হয়েছিল সেদিন, যা আজও রেকর্ড। কত হাজার লোক যে ফিরে গেছিল সেদিন টিকিট না পেয়ে, তার ইয়ত্তা নেই। যাই হোক খেলা শুরু হলো। মাঠে কত লোক হয়েছিল সেটা বলতে একটা নিজের কথাই বলি; পুরো খেলায় আমি এক পায়ে দাঁড়াতে বাধ্য ছিলাম। কারণ, দ্বিতীয় পা রাখার জায়গা পাইনি। খেলার শুরুতেই নাজিমুল হক গোল করে এগিয়ে দেয় ইস্টবেঙ্গলকে। তারপর শুরু ভাইচুং ম্যাজিক। অসাধারণ গোল করে এগিয়ে দিলো ইস্টবেঙ্গলকে (২-০)। এরপর খেলায় ফেরে মোহনবাগান। সত্যজিৎ চ্যাটার্জীর কাছ থেকে পাস পেয়ে গোলার মতো শটে গোল করেন চিমা ওকোরি (২-১)। এরপর আবার ভাইচুং। সোসোর কর্নার থেকে অসামান্য ফ্লিকে ৩-১। এরপর সবশেষে ৪-১ সেই ভাইচুং এর গোলেই। হ্যাটট্রিক ভাইচুং।

মাঠে সেদিন যা চিৎকার হয়েছিল, ভাবলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়। এত আনন্দ তার আগে কোনোওদিন হয়নি। সবাই গ্যালারিতে এর ওর তার গায়ে আবির মাখাচ্ছে, জল ঢেলে দিচ্ছে, জড়িয়ে ধরে কাঁদছে – সে এক অনাবিল দৃশ্য। সোসো একটা ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব এর পতাকা নিয়ে বিজেন সিং-এর সঙ্গে খালি লাফাচ্ছিলো আর দর্শকদের নাচতে উৎসাহ দিচ্ছিলো। প্রায় পুরো রাস্তাই ব্যান্ড-এর তালে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরেছিলাম। এত অনাবিল আনন্দ আগে হয়নি। পরের দিন সকালে উঠে দেখি, আনন্দবাজার পত্রিকায় বিশাল ফন্টে হেডলাইন – “হীরের দর্পচূর্ণ”। আবার আনন্দে চোখে জল এসে গেলো।

২৩ বছর কেটে গেছে তারপর – আজও আমার স্মৃতিপটে সেদিনের স্মৃতি অমলিন। মনে হয় যেন ২৩ দিন আগের ঘটনা। তাই এই সুখস্মৃতি সবার সাথে ভাগ করে নিলাম।

জয় ইস্টবেঙ্গল !!”

Author

Du-কলম

Join the Conversation

  1. এই খেলায় চিমা বাই সাইকেল কিক এ গোল করেছিল। ম্যাচটা দূরদর্শন সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। যদিও অনেক ছোট ছিলাম, ফুটবল বুঝতাম না। কিন্তু কেন জানি না আজও এই ম্যাচটা মনে আছে।

  2. অসাধারণ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ লেখকের কলমে । স্মৃতি বড়ই মধুর। শুভেচ্ছা অফুরান…. –কবি সৃজন

Leave a Reply to aritra Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!