Home গল্প, রহস্য ও ভৌতিক অন্ধ বিচার – ১৩
গল্পরহস্য ও ভৌতিক

অন্ধ বিচার – ১৩

গোপা মিত্র

অন্ধ বিচার

রহস্য ধারাবাহিক (পর্ব-১৩)

একজন মাত্র সাক্ষীর জেরাই এখনও বাকী রয়ে গেছে, রীতিনের গাড়ীর ড্রাইভার। কিন্তু সুমেধা তো এখনও এসে পৌঁছলো না। তবে কি সুমেধাকে তিনি যে কাজটা দিয়েছেন, তাতে সে সফল হলো না?

কিন্তু উপায় নেই। অজেয় রায় উঠে দাঁড়ালেন শেষ সাক্ষী অর্থাৎ রীতিনের গাড়ীর ড্রাইভারকে জেরার জন্য। দেখলেন হাসি হাসি মুখে সুমেধা হন্তদন্ত হয়ে কোর্টে প্রবেশ করছে। সে অজেয় রায়ের কাছে এসে কি যেন একটা তার হাতে দিল। সেটা রেখে দিয়ে অজেয় রায় কাঠগড়ার দিকে ফিরলেন। 

– তোমার নাম? 

– সুমন্ত জানা।

– তুমি কি বরাবরই রীতিন আগরওয়ালের গাড়ী চালাও? ওর কি আর কোনো ড্রাইভার নেই? ওর তো একাধিক গাড়ী রয়েছে। তুমি রীতিনের কোন গাড়ীটা চালাও?  

– আজ্ঞে, ওর আরো একটা গাড়ী আছে বটে, তবে সেই গাড়ীটা দরকার পড়লে উনি অন্য কোনো ড্রাইভার ডেকে নিয়ে তাকে দিয়ে চালান। নতুন এই গাড়ীটা কেনার পর আমি ছাড়া এই গাড়ীটায় আর কেউ হাত দেয় না।

– আচ্ছা, এই গাড়ীটা কি উনি নিজেও কোনোদিন চালান নি? না কি উনি ড্রাইভিং জানেন না?

– জানেন। মাঝেমধ্যে চালিয়েও থাকেন। কিন্তু বড় সাহেব মানে ওনার বাবার কড়া নির্দেশ অনুযায়ী গাড়ী উনি চালালেও, আমি সবসময়ই ওনার পাশে থাকি।

– আচ্ছা দীঘা যাবার দিন গাড়ী কে চালাচ্ছিলো- তুমি না উনি?

– আমিই চালাচ্ছিলাম। উনি আমার পাশে বসেছিলেন।

– ঠিক তো? উনি তাহলে তোমার পাশেই বসেছিলেন?

– হ্যাঁ।

– আর আমি যদি বলি তুমি একলাই সেদিন গাড়ি চালিয়ে দীঘা গিয়েছিলে, উনি তোমার পাশে ছিলেন না।

– না না, এটা ঠিক নয়। উনি সেদিন আমার পাশেই বসেছিলেন।

– বেশ এটা তবে কি দেখাচ্ছে?এই কথা বলে তিনি জজ্‌সাহেবের দিকে একটা পেনড্রাইভ এগিয়ে দিলেন, যে পেনড্রাইভটা এক্ষুনি সুমেধা এনে তার হাতে তুলে দিয়েছে। 

সকলে উদ্‌গ্রীব হয়ে পেনড্রাইভের সেই ফুটেজ দেখতে লাগলো। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গোল্ডেন ইয়েলো কালারের একটা নতুন মডেলের এস এউ ভি গাড়ী এগিয়ে চলেছে। এবার দীঘার রাস্তার সেই ল্যান্ডমার্ক নজরে এলো, যেখানে দেখা যাচ্ছে একটা শাড়ীর বিজ্ঞাপন আর তার পরেই একটা বড় মিষ্টির দোকান আর ধাবা, দুটো জায়গাতেই রাস্তার ঠিকানা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে খদ্দের দের বেশ ভীড়। এবার গাড়ীর ভেতরটা বেশ স্পষ্ট হয়েছে। দেখা যাচ্ছে একজন ড্রাইভার সেই গাড়ী চালাচ্ছে, তার পাশে তো কেউ নেইই এমনকি পিছনেও নেই। 

সুমন্ত চুপ। মুখে কোনো কথা নেই। 

জজ্‌সাহেব এবার অজেয় রায়কে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার আর কোনো সাক্ষী আছে কি? কিম্বা আর কাউকে জেরা করতে চান কি”? 

“না”। 

“বেশ, আর আপনি”? তিনি এবার বিবাদী পক্ষের উকিলের দিকে ফিরলেন। 

তিনি মাথা নেড়ে না জানালেন। 

“বেশ, কাল তাহলে আমি এই মামলার রায় ঘোষণা করব”। জজ্‌সাহেব বললেন। 

“স্যার, তার আগে আমার একটা আবেদন আছে। অন্ধ মেয়ের ওপর অভিযুক্তের অত্যাচারের যে তথ্য বা প্রমাণ আদালতে সাক্ষীদের বয়ানে উঠে এলো তার সবটাই সাক্ষীদের বয়ান বা পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অভিযোগকারিণী তার কথার সত্যতার কোনো প্রমাণ দেয় নি। আপনি যদি অনুমতি করেন তাহলে অনুপমা তার বক্তব্যের সত্যতার প্রমাণ দিতে রাজী আছে”। অজেয় রায় বললেন।

“বেশ আজ রাতটুকুই তাকে সময় দেওয়া হল। এর মধ্যেই তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, সে সত্যি বলেছে”। 

বিবাদী পক্ষের উকিল বলে উঠলেন, “মডেল কিন্তু আমরাই ঠিক করবো”। 

অজেয় রায় বললেন যে ঠিক আছে, তাই হবে, তারপর মুচ্‌কি হেসে বেরিয়ে গেলেন। তিনি কোনো ভাবেই আইনের ফাঁক গলে আসামিকে বেরিয়ে যেতে দেবেন না। 

জজ্‌সাহেব বিবাদী পক্ষের উকিলকে কিছু বলে, পেশকারকেও কিছু নির্দেশ দিয়ে কোর্টরুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন।

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!