গোপা মিত্র
অন্ধ বিচার
রহস্য ধারাবাহিক (পর্ব-১২)
সুমেধা এখনও এসে পৌঁছলো না। কিন্তু অজেয় রায়ের অপেক্ষা করার সময় নেই। তিনি কোর্টে উপস্থিত রীতিনের বন্ধুদের দিকে ফিরলেন, তারপর জজ্সাহেবের দিকে ফিরে তাদের জেরার অনুমতি চাইলেন। তিনি অনুমতি দিলে অজেয় রায় বললেন, “স্যার আমার একটা অনুরোধ আছে, আমি ওদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে জেরা করতে চাই। আমি যখন একজনকে জেরা করব, তখন কোর্টে অন্য বন্ধুরা উপস্থিত থাকতে পারবে না”।
“বেশ, তাই হবে।”, জজ্সাহেব অনুমতি দিলেন। সব বন্ধু্রা কোর্ট রুমের বাইরে চলে গেল।
এবার তিনি একজনকে ডেকে নিলেন।
– তোমার নাম?
– শুভময় ঘোষ?
– কতদিন ধরে রীতিনের সঙ্গে তোমার পরিচয়?
– কলেজে আমরা একসঙ্গে পড়তাম। চাকুরীসূত্রে এখন অবশ্য আমি বাইরে থাকি। তবে যোগাযোগটা রয়েই গেছে। তাই ও যখন নিজের বিয়ের আগে একটা ব্যচিলার পার্টীর জন্য আমন্ত্রণ জানালো আমি রাজী হয়ে গেলাম”।
– বেশ, ঘটনার দিন সকালে রীতিন যখন রির্সটে পৌঁছেছিল, তখন কি তুমি বা তোমার বন্ধুরা সেখানে উপস্থিত ছিলে?
– হ্যাঁ, ছিলাম।
– তুমি এসেছিলে কিসে?
– ট্রেনে স্যর।
– ঠিক কটার সময় রীতিন সেখানে পৌঁছায়?
– প্রায় সাড়ে এগারোটা।
– সে নিশ্চয় তার গাড়ীতেই এসেছিলো? কি রঙের গাড়ী?
– লাল রঙের।
– কি পোষাক পরেছিলো? মানে আমি জানতে চাইছি তার শার্টের রঙ বা প্যান্টের রঙ।
– নীল ষ্ট্রাইপড শার্ট আর জিন্সের প্যাণ্ট।
– বেশ তুমি এবার কাঠগড়া থেকে নেমে এসে সামনে গিয়ে বোসো।
এইভাবে তিনি এক এক করে বাকী তিনজনকেও ডেকে নিলেন এবং ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাদের একই প্রশ্ন করলেন।
তারা সকলেই বললো যে তারা সকলেই এক সঙ্গে কলেজে পড়েছে, সেই সূত্রেই বন্ধুত্ব। তারা সকলেই রীতিনের আমন্ত্রণে ব্যচিলার পার্টিতে যোগ দিতে এসেছিল, তবে এসেছিল, আলাদা আলাদা যানে। কেউ ট্রেণ, কেউ ভাড়া গাড়ী, এবং একজন অটোয়-কারণ সে থাকে কাছেই। সকলেই তারা রীতিনের আগে রির্সটে পৌঁছে গিয়েছিলো। তবে রীতিনের পোষাকের ব্যাপারে তাদের কারো বক্তব্যই কারো সঙ্গে মিললনা। কেউ বলল, গোল গলা টি সার্ট, রিপ্ড জিন্স, তো কেউ বললো ষ্ট্রাইপড্ সার্ট ক্যাজুয়াল প্যান্ট, তো কেউ আবার বলল, সলিড কালার সার্ট। গাড়ীর রঙের ক্ষেত্রেও তাদের সকলের বক্তব্য এক হল না। তবে একটা ব্যাপারে তাদের সকলের বক্তব্যই মিলে গেল, রীতিনের রির্সটে পৌঁছনোর সময়টা সকলেই সাড়ে এগারোটা বলে জানালো। সকলের এই বক্তব্যটা মিললো কি করে, তবে কি রীতিন আগে থেকেই তাদের এটা বলবার জন্য শিখিয়ে রেখেছিলো?